Sunday, September 9, 2018

বিভাগের ৬০ বছর পূর্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট চয়েস দেয়ার সময় মামা বলছিল যেঃ "বায়োকেমিস্ট্রি প্রথম দিকে দিও। এরা রিসার্চ ওরিয়েন্টেড। পাশ করার পর বাইরে স্কলারশিপ পাবা।" এর আগে কোন দিন এই নাম শুনি নাই। সব সময় ভাবতাম যে, আব্বুর মত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হব। পাশ করে একটা ফার্ম দিব। আব্বু চেয়ারম্যান, আমি ভাইস-চেয়ারম্যান। পুরাই ভাব!
সব ভাব এক পাশে রেখে ভর্তি হলাম। ফার্স্ট ইয়ারে গ্যালারীতে ক্লাস করতাম। এসি ছিল। আহ! কি শান্তি। বন্ধু হইল কিছু। সব কিছুই ভাল ছিল। খালি এক্সামে নাম্বার কম পাইতাম। বাসার মানুষ জন নাম্বার জিজ্ঞেস করত। আর ভাবত, আমি পড়ালেখা করি না। মুভি দেখি খালি।
সেকেন্ড ইয়ারে ক্লাসে এসি ছিল না। গরম লাগত। মাথার থেকে অনেক দূরে এবং অনেক উপরে ফ্যান ঘুরত। টি-শার্টের বোতাম একটা খুইলা ফুঁ দিতাম আর লেকচার তুলতাম। এই বছর নাম্বার একটু বেশি পাইতাম। পরে দেখলাম অন্যরা আরও বেশি পায়।
থার্ড ইয়ারে এসি ছিল। শুধু তাই না, এসি এর রিমোট আমার কাছে থাকতো। মন মত কনট্রোল করতাম। গরমে মোস্তফার চিপা থেকে চা খেয়ে এসে একটু বাড়ায় দিতাম। কারন, আমার গরম লাগতেছে! এই বছরের পড়ালেখায় মজা ছিল। প্লাস লতিফ স্যার আমাদের প্রোগ্রামিং শিখাইত। নাম্বার জিনিসটা আপেক্ষিক হয়ে গেল।
ফোর্থ ইয়ারে চার তালায় ক্লাস করতাম। এসি ছিল। এসি এর রিমোট প্লাস প্রোজেক্টরের দায়িত্ব আমার ছিল। এই ইয়ারে নাম্বার, জিপিএ কিছুই ব্যাপার ছিল না। পেপার, জিআরই - এই সব ছিল কিওয়ার্ড। ফাইনাল পরীক্ষা অনেক দিন ধরে হইল। সবাই সন্মানের সাথে শেষ করল।
মাস্টার্সে গবেষণা করতাম। ল্যাব লাইফ অনেক ভাল ছিল। ক্লাসের নাম্বার, জিপিএর কথা অনেকেই ভুলে গেছিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই, সব এলোমেলো হয়ে গেল। অনেক গুলো রাস্তা সামনে এসে সবাইকে এদিক ওদিক টেনে নিয়ে গেল। ধারনা করা মুশকিল, আমরা সবাই একই বই পড়েছিলাম এই পাঁচ বছর।
বিভাগে ৬০ বছর পূর্তি চলতেছে। আমার মত এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী পাশ করে বের হয়ে গেছে। অনেকটা যুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়ার মত। যুদ্ধ শেষ হলেও ট্রেনিংটা সাথেই ছিল। যেন সামনের দিনে আবার ফাইট করতে পারি। নিয়মিত বই পড়া, সাপ্তাহিক পরীক্ষা, বছর জুড়ে ল্যাব ক্লাস আর রিপোর্ট জমা দেয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই আজ কোন প্রেসারকে প্রেসার মনে হয় না।
৬০ বছর পূর্তির আয়োজনে বিভাগে অনেক লাইট জ্বলজ্বল করতেছে। তবে সবচেয়ে বেশি জ্বলজ্বল করছে বিভাগের প্রাক্তন স্টুডেন্টরা। যারা এখনও নিজেদের চেষ্টা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে ভাল কাজ করছেন আর বিভাগের নাম দিনে দিনে উজ্জ্বল করছেন। 

No comments:

Post a Comment