গ্রীক মিথোলজির কিছু গল্প অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এর মধ্যে ইকো আর নারসিয়াসের গল্পটা সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং মনে হয় আমার কাছে।
ইকোর কাজিনদের সাথে জিউসের প্রেম ছিল। জিউস তাই গোপনে ইকোর কাজিনদের সাথে দেখা করতে বনে-জঙ্গলে যেতো। আর সেই সময় পাহারা দেয়ার কাজ করত ইকো। একদিন জিউসের বউ, হেরা, ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরে, জিউসকে হাতেনাতে ধরার জন্য বনের দিকে যেতে থাকে। ঐ সময় ইকো হেরার সাথে গল্প-গুজব করে তার পথ আগলে রাখে। এই সময়ের মাঝে জিউস পালিয়ে যায় হেরার উপস্থিতি বুঝে। আর হেরাও জিউসকে হাতেনাতে ধরতে পারে না। কিন্তু, হেরা বুঝতে পারে ইকো’র কারসাজি। সে ইকোকে অভিশাপ দেয়। অভিশাপটা ছিল এরকম, ইকো নিজের থেকে কোন কথা বলতে পারবে না। শুধু মাত্র কেউ তার সামনে কোন কিছু বললে, সে সেটা রিপিট করতে পারবে।
দুঃখে ইকো বনে চলে যায়। বনে গিয়ে সে দেখা পায় সুদর্শন নারসিয়াসের। নারসিয়াস নিজেও জানতো না সে দেখতে কতোটা সুদর্শন। বরং, তার প্রতি মানুষের অমায়িক ব্যাবহার দেখে সে বুঝতে পারতো না, সবাই তার সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করে কেন? যেহেতু, ইকো নিজের থেকে কিছু বলতে পারতো না, তাই সে গোপনে সব সময় নারসিয়াসকে ফলো করতো। তো নারসিয়াস একদিন নদীতে পানি খেতে গিয়ে নদীর জলে নিজের মুখ দেখে বিমোহিত হয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে, এই সুদর্শন লোকটা কে? সে জিজ্ঞেস করেঃ “তুমি কে?” এই সুযোগে ইকোও আড়াল থেকে বলেঃ “তুমি কে?” নারসিয়াস বিরক্ত হয়। কে তার কথা রিপিট করছে এই ভেবে। নারসিয়াস যখন সেই লোকটাকে ধরতে যায়, তখন সে হারিয়ে যায়। কিন্তু এক দিকে নারসিয়াস জলের মাঝে যেই মুখ দেখা যায় তার প্রেমে পড়ে যায়, আর অন্য দিকে ইকো পড়ে থাকে নারসিয়াসের প্রেমে।
দিনের পর দিন এই ভাবে নদীর ধারে বসে থাকতে থাকতে নারসিয়াস শুকিয়ে যায়, রোগা হয়ে যায়। কিন্তু, তারপরও সে ঐ জায়গা থেকে অন্য কোথাও যায় না। অন্য দিকে, ইকো বুঝতে পারে নারসিয়াস অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে তো কথা বলতে পারবে না। এমন করেই চলতে থাকে। একটা সময় নারসিয়াস মারা যায়। আর সে ফুল হয়ে ভেসে যায় নদীর জলে। অন্যদিকে, ইকো নারসিয়াসের প্রেমে পড়ে গোপনে তাকে দেখতে দেখতে সেও মারা যায় এক সময়, আর সে মিশে যায় বাতাসে প্রতিধ্বনি হয়ে।
শিক্ষণীয় ব্যাপার হল, নারসিয়াস যেমন নিজের প্রেমে পড়ে সব কিছু ভুলে গিয়ে এক সময় মৃত্যু বরন করে, তেমনি ইকোও নারসিয়াসের প্রেমে পড়ে সব কিছু ভুলে গিয়ে এক সময় মারা যায়। এই ধরনের ক্যারেক্টার আমাদের মাঝে আজও দেখা যায়। এক ধরনের লোক আছে, যারা সারাক্ষণঃ “আমি এটা করেছি, আমার এটা আছে, আমি এটা পারি, আমি এখানে গিয়েছি”, এই রকম “আমি-আমি” করতে করতেই জীবন শেষ করে দেয়। আর এক ধরনের লোক আছে, যারা সারা জীবন নিজের থেকে কিছু বলতে ও করতে পারে না, শুধু মাত্র অন্য কারো “প্রতিধ্বনি” হয়ে বেঁচে থাকে। আর পুরোটা জীবন অন্য কাউকে ফলো করতে করতে কাটিয়ে দেয়।
Based on the book “Gods and Goddesses in Greek Mythology” by Michelle M. Houle