Sunday, September 9, 2018

প্রফেসর আশিকারি

প্রফেসর আশিকারিকে নিয়ে লিখবো লিখবো করে প্রায় ২ বছর কালক্ষেপণ করে ফেলেছি। ২০১৬ সালের মার্চ মাসের কথা। জেএসপিপি কনফারেন্সে আমার বস একটা সেশনের আয়োজন করে। ইথিলিন নিয়ে। সেই সেশনে কয়েকজন বিগ শট প্রফেসর ছিল। আশিকারি তাদের মাঝে একজন। সেশনের ৫ জন স্পীকার, আমার বস, একজন পোস্টডক আর আমাদের ল্যাবের আমি আর আরেকটা মেয়ে, আমরা একটা ডিনার পার্টিতে যাই। সেই ডিনার পার্টিতে আশিকারি উনার স্টুডেন্ট লাইফের একটা গল্প বলে আমাদের। উনি স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায়, উনার আর্থিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার ছিল না। উনি রাতের বেলা একটা কনভেনিয়েন্ট স্টোরে পার্ট টাইম হিসেবে কাজ করতেন। পার্ট টাইম জব করা জাপানিজ স্টুডেন্টদের মাঝে খুবই কমন ঘটনা। সেটা বিশাল কোন কিছু না। কিন্তু, এই জব থেকে সে যে টাকা পেতো, সেটা তার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। সে খেয়াল করতো, প্রতি রাতের শেষে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার গুলো তাদেরকে বলা হত ফেলে দিতে। ঐ সব লাঞ্চ/ডিনার বক্সগুলো ভালোই থাকতো, শুধু মাত্র খাবারের ফ্রেসনেসের জন্য তা ফেলে দিতো তারা। সে সবার সাথে খাবার বক্স গুলো ফেলে দেয়ার পর, কাজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় ঐ ময়লার ঝুড়ি থেকে খাবার বক্স নিয়ে যেতো। কিন্তু মুশকিল হল জাপানিজরা অনেক লাজুক জাতি। সবার মত তারও মনের মাঝে কাজ করত, কেউ যদি কখন দেখে ফেলে, তাহলে তো সর্বনাশ। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য সে একটা হেলমেট কিনল। বাইকের হেলমেট। সে ঐ বাইকের হেলমেট পড়ে ময়লার ঝুড়ি থেকে খুব সাবধানে খাবার বক্স তুলে নিয়ে আসতো। অনেকেই খেয়াল করলো বিশ্ববিদ্যালয়ে, সে চালায় সাইকেল, কিন্তু সে বহন করে মোটরবাইকের হেলমেট। কেউ ব্যাপারটা মিলাতে পারতো না, সে ও কাউকে বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে পারতো না।
মাঝে অনেক বছর চলে গেছে। আশিকারি এখন জাপানে যারা প্ল্যান্ট সায়েন্সে কাজ করে তাদের মধ্যে তাকে টপ ৫ বলা যায়। ন্যাচার, সায়েন্স নিয়মিত পাবলিশ করে। যখন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেন্ডরা এখন শুনে, সে ন্যাচার, সায়েন্স পাবলিশ করে, তারা বলেঃ “আরেহ, এইটা ঐ আশিকারি না, যে মোটর বাইকের হেলমেট পড়ে সাইকেল চালাত।”
জীবনে কোন কিছুই তেমন প্ল্যান মাফিক হয় না। খারাপ সময় আসে। ঐ সময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়াটাই সাফল্যর পূর্ব শর্ত। কারণ, সময়ের সাথে সাথে অনেক পূর্ববর্তী বিপদ হারিয়ে যায়। নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। আর নিজের খারাপ সময়ের কথা বলে, সেটা নিয়ে মজা করে, মানুষকে অনুপ্রাণিত করা জিনিয়াসদের ক্যারেক্টার।

No comments:

Post a Comment