Sunday, September 9, 2018

আম্মু

স্কুলে থাকা অবস্থায় প্রতিদিন সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠতাম। ওজু করে, নামাজ পড়ে, তারপর ৫-১০ মিনিট কোরান শরীফ পড়তাম। এটা আম্মুর নির্দেশ ছিল। তখন না বুঝেই পড়তাম, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপর নাস্তা করতাম। বেশির ভাগ সময়ই রুটি। এমন কোন দিন হয় নাই যে, নাস্তা না করে ৬ টার দিকে স্যারের বাসায় পড়তে গেছি। আর আমাদের নাস্তা বানানোর জন্য আম্মু প্রতিদিন আমাদের ও আগে ঘুম থেকে উঠত। এটা শুধু এক দিন এর বর্ণনা না। বছরের পর বছর।
স্কুলে টিফিনের সময় ছিল ২ টা থেকে ২:৩০ পর্যন্ত। স্কুল কাছে। আমি দৌড়ে বাসায় আসতাম। এসে দেখতাম যে, টেবিলে ভাত রেডি। আমি খুব দ্রুত খেতাম। খেয়ে দৌড় দিয়ে মসজিদে যেতাম। তারপর নামাজ পড়ে স্কুলে যখন ফেরত যেতাম, তখন হাতে ২-৩ মিনিট থাকতো। এমন কোন দিন হয় নাই যে, এসে দেখছি যে টেবিলে ভাত নাই, অথবা সময় লাগছে।
কলেজে পড়ার সময় সকাল বেলা আম্মু যখন টাকা দিত, তার মাঝে ২ টাকা থেকে শুরু করে সব প্রকারের নোট থাকতো। যেন আমাকে কোথাও ভাংতি বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। কলেজ করে বাসায় ফিরে আসতে প্রায় বিকাল হত। আমি ফিরলে তখন আমি আর আম্মু এক সাথে দুপুরের খাওয়া হত।
ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় যখন ছুটিতে বাসায় যেতাম। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম। ৯ টা বাজলেই আমার বন্ধুরা বলতো, ওরে বাসায় পাঠাই দেই। নাইলে অ্যান্টি কল দিবে। ঠিক ৯ টা বাজলেই, আম্মু কল দিতো। বাসায় এসে সবাই খেয়ে ফেললেও আমি আর আম্মু এক সাথে খেতাম। আমি খেলা দেখার জন্য রাত জাগলে, আম্মু ও এসে প্রায়ই খেলা দেখত। যদিও আম্মু খেলা বুঝে না। শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করতো, তোমার টিমের কালার কোনটা? আমি বলতামঃ সাদা।
অস্বীকার করার উপায় নাই যে, অনেক বড় হয়ে গেছি। আর এই বড় হবার সাথে সাথে জড়িয়ে গেছি অনেক সমস্যায়। যেই সমস্যাগুলো বাদ দেয়া সম্ভব না। এখনকার সমস্যা আম্মুকে বুঝানো সম্ভব না। ক্লনিং এ পজিটিভ কলোনি আসতেছে না, ওয়েস্টার্নে ঠিক সাইজের ব্যান্ডটা পাচ্ছি না, জায়গা মত কো-লোকালাইজেশন হচ্ছে না – এই সব সমস্যা নিয়ে আলাপ করলেও আম্মুর কাছে কোন সমাধান নাই। কিন্তু, আমি আম্মুর সাথে কথা বললেই সে বুঝতে পারে, আমি টেনশনে আছি কিছু নিয়ে। আম্মু তখন বলেঃ বাবা, নামাজ পড়, কোরান শরীফ পড়। শেলডন কুপারের মা ও একই জিনিস বলে, শুধু অন্য মোড়কে।
অন্য সবার মতই আমি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক বেশি চিন্তা করি। আর ঐ এক জিনিস থেকেই সকল হতাশা। আজকে ফজরের পর আমি সূরা হুদ পড়তেছিলাম। ৪৯ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত পড়ার পর, মনের মাঝে একটা শান্তি কাজ করতেছিল। কেউ খেয়াল করে প্রথম থেকে পড়ে ঐ পর্যন্ত আসলে, একই জিনিস অনুধাবন করবে। আম্মু হয়তো আমাকে প্রতিটা সমস্যার জন্য সাহায্য করতে পারবে না, কিন্তু এমন সাধারন কিছু জিনিস সব সময় বলে, যা শুনলে আমার অন্যান্য সমস্যা কোন না কোন এক ভাবে প্রশমিত হয়ে যায়।
কত মানুষকে নিয়েই তো লেখি। যে এত্ত কিছু দিল, আর দিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য একটু লেখাই যায়। যদিও আম্মু এটা পড়বে না কোন দিন। হয়তো কখনও ভাববেও না যে, আমি এমন করে লেখতে পারি অথবা বলতে পারি তাকে নিয়ে। কারণ, বাসায় সব সময় আবল-তাবল জিনিস নিয়েই আমরা প্যাঁচাল পারি।

No comments:

Post a Comment