আমাদের স্কুলে এক স্যার ছিল, যিনি বিভিন্ন ক্লাসে বিভিন্ন বিষয় পড়াতেন। যেমন, ক্লাস ফোরে সাধারন জ্ঞান, ক্লাস সিক্সে থাকতে ইসলাম শিক্ষা, ক্লাস সেভেনে কৃষি শিক্ষা। উনার নাম মান্নান। সেই সময় আমাদের স্কুলে চরম পর্যায়ে পিটানো হত। ক্লাসে বাড়ির কাজ না করে আনলে মাইর, কম করে আনলে মাইর, পড়া না পারলে মাইর, দুষ্টামি করলে ক্যাপ্টেন নাম লিখলে মাইর, ক্লাসে হাসাহাসি করলে মাইর, ক্লাস চলা অবস্থায় কথা বললে মাইর। সোজা কথায়, প্রতি দিন কোন না কোন কারণে কপালে মার থাকতো। শুধু মান্নান স্যারের ক্লাসে একটু আমরা শান্তি পেতাম। উনি ক্লাসে এসে খুব দ্রুত শনাক্ত করতেন, কে কে পড়া শিখে আসে নাই। তারপর উনার কাছে বেত থাকার পর ও মারতেন না। বলতেন যে, যারা পড়া পারে নাই, তারা নাচ-গান-অভিনয়-জোকস কিছু করে অন্যদেরকে আনন্দ দিতে পারলে, তার পড়া না পারার শাস্তি মাফ।
আমাদের এক বন্ধু পড়া পারে নাই। ওরে সামনে নিয়ে যাওয়া হল। সে বলল যে, গান গাইবে। শুরু করলঃ “সবার জীবনে প্রেম আসে, তাই তো সবাই ভালবাসে।” স্যার ওরে থামায় দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোর জীবনে প্রেম আসছে?” ও উত্তর দিলো, “না, স্যার। এখনো আসে না।” স্যার সাথে সাথে পিছন থেকে মাইর শুরু করল, আর বললঃ “এই রকম বাজে গানের গলা হইলে প্রেম জীবনেও আসবে না। নেক্সট দিন থেকে পড়া না, তুই শুধু গান শিখে আসবি!”
উনি আমাদের ক্লাস ফোরে সাধারন জ্ঞান ক্লাস নেয়ার সময়, এক পরীক্ষার সিলেবাস ছিলঃ ১৯৯৯ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ। সবাই তখন ধুমাইয়া খেলা দেখত। সবাই পরীক্ষায় ভালো করলো। প্রশ্ন ছিলঃ কে বেশি উইকেট নিছে? কে সব চেয়ে স্পীডে বল করছে? বাংলাদেশের কোন খেলায় কে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ? – এই সব।
স্কুল কমিটির সাথে কোন এক ঝামেলায় প্রতিবাদ করাতে স্যারের চাকরি চলে যায়। তখন আমরা ছোট হওয়ায় এর চেয়ে বেশি কিছু জানতাম না। আর পাই নাই মান্নান স্যারকে। কিন্তু, যেই জিনিসটা আমার মাথায় সব সময় ঘুরে, আমি যদি কখন পড়াইতে যাই, আমি আসলে নিজেকে কেমন টিচার হিসেবে উপস্থাপন করবো। রাগী? নাম্বার কম দিবো? কঠিন কঠিন প্রশ্ন করবো? স্টুডেন্টদের সাথে হুদাই ভাব নিবো? নাকি ক্লাসে জোকস মারবো? মনে হয়, মান্নান স্যারের মতন হওয়াই ভালো। The Office টিভি সিরিজের বস মাইকেলের ভাষায় বললেঃ “আমি প্রথমত বন্ধু, দ্বিতীয়ত শিক্ষক, তৃতীয়ত এন্টারটেইনার!”
No comments:
Post a Comment