Sunday, September 9, 2018

UCL Final 2018

*** কেউ যদি ফুটবল ফ্যান না হয়ে থাকেন, নিয়মিত খেলা না দেখে থাকেন, সময় যদি অতি মূল্যবান হয় - তাহলে এই লেখাটা পড়ে সময় নষ্ট না করাই শ্রেয়। মতামতের ভিন্নতার কারনে কোন ধরনের মন্তব্য করলেই লোকজন দল-কানা হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে বলে, অনেক দিন ধরেই খেলা নিয়ে কোন লেখালেখি করি নাই। কারন, অহেতুক তর্ক করে সময় এবং সম্পর্ক নষ্ট করা আমার কাম্য নয়। এই সিজনের সব খেলাই শেষ বলতে গেলে। আর তাই আজকের ফাইনাল এবং কিছু প্রাসঙ্গিক ব্যাপার নিয়ে লিখলাম। লেখায় যুক্তি থাকলে শেয়ার করতে পারেন, অন্যথায় কমেন্টে এসে তর্ক করবেন না প্লিজ। এতে আমার আর আপনার - সময় এবং সম্পর্ক দুইটাই অটুট থাকবে। ***
কিছু দিন আগে দেখলাম বড় ভাই করিম, রমজানের রোজা রাখতেছে, ইফতার করতেছে, ইফতারের সময় ছবি তুলে ইন্সটাগ্রামে দিতেছে। নিশ্চিত বেচারা রোজা রেখে দোয়া করছে যেন সে গোল পায়। তা না হলে ফাইনালের মত বড় একটা খেলায় এমনভাবে গোল পেয়ে দলকে আগায় দেয়া নরমাল ঘটনা না।
বেল গুরুন্টি মাইরা যেই গোলটা করছে, এটা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। কিন্তু, এটা নিয়ে ইব্রা সাহেব কোন একটা কমেন্ট অতি স্বল্প সময়ের মাঝেই করবে বলে আশা করতেছি। আফসোস, বেলকে মোটামুটি সিজনের অর্ধেক খেলায় মাঠের বাইরে থাকা লাগে ইনজুরির জন্য।
সালাহ এই সিজনে লিভারপুলের হয়ে অস্থির সার্ভিস দিছে। স্কোর করার দৌড়ে ইংলিশ লিগে এই সিজনে সবার উপরে। আপনারা সবাই কতটুকু লিভারপুলের খেলা ফলো করেন জানি না। কিন্তু, যদি আপনি পরিসংখ্যান এবং টুকটাক হাইলাইটস দেখে সালাহ এর ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে পরের কয়েকটা ইনফরমেশন আপনার ধারনা কিছু ব্যাপারে পরিস্কার করবে, অথবা আপনি আমাকে গালাগালি করবেন।
সালাহ প্রচুর গোল করছে সত্যি, তার গোলের কার্যকারিতা বুঝার জন্য ইংলিশ লীগের পয়েন্ট টেবিলে তাকানো লাগবে। তাদের অবস্থান ৪। সর্বমোট পয়েন্টে ম্যান সিটির সাথে পার্থক্য (১০০ - ৭৫) = ২৫। এটা খুব স্পষ্ট যে, সালাহ ম্যাচ উইনার না। মেসি যেমন গোল করে ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে খেলা বের করে আনে, রন যেমন এক লেগে পিছিয়ে থেকে পরের লেগে হ্যাট্রিক করে খেলা বের করে আনে, সালাহ তা না।
অন্য দিকে, একজন এর উদাহারন না দিলেই না। হ্যারি ক্যান। টানা ৪ সিজনে মোট গোল সংখ্যা ১০৫। স্পুরসের পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকান, ক্যানের অবদান চোখে পড়বে। কিন্তু, ক্যান এত অবদান রাখার পরেও যদি আপনি স্পুরসের পুরা ৯০ মিনিটের খেলা নিয়মিত দেখে থাকেন, আপনি কোন দিন তাকে টপ স্ত্রাইকার বলে স্বীকৃতি দিবেন না। কারন, স্পুরসের মাঝ মাঠ অনেক স্ত্রং। ফলে ক্যান অনেক ভাল বল পায়, যার মাঝে সে ইচ্ছা মত মিস করার পরেও যেই গোল গুলো করতে পারে, তা দিয়ে দল জিতায়, পয়েন্ট টেবিলে উপরে নিয়ে আসে।
ভাল কথা। সালাহ এর সমস্যা, ক্যানের সমস্যা! তাহলে প্রশ্ন আসে, আমার দৃষ্টিতে ভালোটা কে? এই সিজনে ইংলিশ লীগে ম্যান সিটি ফাটাইছে। কেউ কিন্তু সালাহ বা ক্যানের মত ৩০/৩২ টা করে গোল করে নাই সিটির হয়ে। যেই মানুষটাকে সবাই নোটিশ করে না খুব, মাঝ মাঠের কেভিন দি ব্রুনার। যে পরিমাণ অ্যাসিস্ট সে করছে, আর যেই ভাবে বল বানায় দিছে, যদি কেউ ম্যান সিটির খেলা গুলো দেখা থাকেন (৯০ মিনিটের খেলা), তাহলে মাথায় আছে নিশ্চিত। কেভিন মাঠে থাকা অবস্থায় মাত্র ~১২% খেলায় ম্যান সিটি হারছে। কেউ যদি এই বার ব্যালন ডি'র পাওয়ার মত থাকে, সেটা কেভিন।
বার্সা অসাধারণ খেলছে লা লিগার পুরা সিজনে। আর একটু হইলে অপরাজিত থাকার রেকর্ড করে ফেলত। ম্যান সিটি পুরা সিজনে সবচেয়ে বেশি গোল, সব চেয়ে বেশি পয়েন্ট ইত্যাদি অনেক গুলো রেকর্ড করছে। এর মাঝে বার্সা এবং সিটি কেউ কিন্তু ইউসিএল এর ফাইনালে আসতে পারে নাই। আমি সিউর ছিলাম, সিটি এই বার ইউসিএল ফাইনাল খেলবে। অন্য দিকে, মাদ্রিদ কিন্তু সারা বছর পড়ালেখা না করে ফাইনাল এক্সামের আগে পড়ে কোপ দেয়া স্টুডেন্টের মত শেষ ৫ ইউসিএল ফাইনালের মাঝে ৪ বার ফাইনালে খেলছে, এবং ৪ বার চ্যাম্পিয়নও হইছে, যথাক্রমে বায়ার্ন, অ্যাথলেটিকো, জুভেন্টাস এবং লিভারপুলকে হারিয়ে। সুতরাং, মাদ্রিদ যে ইউসিএল অথবা নক আউট টাইপের জন্য একদম পাক্কা, এই ব্যাপারের কোন অবকাশ নাই। আর মাদ্রিদের ইউসিএল সাফল্যর পিছনে যে সব সময়ের মত বড় ভাই রন এই বারও আছে, তা আপনি বুঝতে পারবেন, যখন খেয়াল করে দেখবেন, এই সিজনে রন অত বেশি গোল পায় নাই, কিন্তু ইউসিএল এর টপ স্কোরার (১৫ গোল)। তার পরেই আছে সালাহ, ১০ গোল নিয়ে। কিন্তু, লিভারপুলের এই সিজনের সাফল্যর পিছনে যেই মানুষটা অনেক বড় কারিগর, সে ক্লপ। তার ট্যাকটিক্স। সে ক্লাবের সাথে চুক্তি বদ্ধ আছে আরও বেশ কয়েক বছর, সালাহ লিভারপুলে থাকবে কি থাকবে না, ৩০/৩২ টা করে গোল করবে কি করবে না, তা আমি নিশ্চিত না, কিন্তু ক্লপের ট্যাকটিক্স আর এর ফলাফল সামনের সিজনেও দেখা যাবে বলে আশা করি।
সর্ব শেষে, আজকের বহুল আলোচিত রামসের করা ফাউল নিয়ে কথা বলি। এই রকম হাই ভোল্টেজ একটা খেলায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার আক্রমনভাগের সবচেয়ে ভয়াবহ প্লেয়ারকে ঘায়েল করার ট্রাই করবে, এটাই স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে, রন, নেইমারের মত একটু পর পর গড়াগড়ি দেয়া লাগবে মাঠে। মেসিকে দেখেন, ডিফেন্ডার ওরে মারার জন্য রেডি থাকে, সে তার স্কিল দিয়ে কিন্তু অস্থির লেভেলে সামাল দেয়। রন - নেইমার তাদের মত হুদাই কান্নাকাটি করে পেনাল্টি নেয়ায় ব্যাস্ত থাকে না। আর যেই টিমে রামস আছে, সালাহ সতর্ক থাকার দরকার ছিল। কারন, রামস খেলে এলাকার বড় ভাইয়ের মত স্প্যানিশ লীগের ত্রাস হয়ে। যে কোন ধরনের আক্রমন সমর্থন যোগ্য না, কিন্তু, কথা হইলো আক্রমণাত্মক না খেললে কোন টিম যে কোন ধরনের ফাইনালে এসে কাপ নিতে পারবে না। বার্সা আর মাদ্রিদ যদি ভদ্র ফুটবল খেলত, তাহলে সিমিওনের গুন্ডা বাহিনীর কাছ থেকে কেউ একটা কাপও নিজেদের ঘরে তুলতে পারতো না।
২০১৬ এর ইউরোর ফাইলনালে পায়েট কিন্তু রণকে মাঠের বাইরে পাঠাইছে। পর্তুগালের কিন্তু প্রধান অস্ত্র সেই ছিল। এই দিকে, লিভারপুলে কিন্তু সালাহ ছাড়াও অনেক স্কোরার আছে। ২০১৬ এর ইউরোর ফাইনালে যদি পর্তুগাল কম ফেভারিট হয়ে, তাদের প্রধান স্ট্রাইকারকে ছাড়া ফাইনাল জিততে পারে, তাহলে ঐ পরিস্থিতির তুলনায় আজকে ঘটনা লিভারপুলের জন্য তেমন বড় ট্র্যাজেডি না। একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন যে, বেলের অসাধারণ গোলটা ছাড়া, বাকি দুইটা গোল তারা হজম করছে গোল কিপারের ইউসিএল ফাইনালে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের সমতুল্য পারফর্মেন্সের কারনে।
সালাহ এর কপাল খারাপ। এই বিশ্বকাপে কিছু একটা করে দেখানোর সুযোগটা হারাল। আর এমন একটা ইনজুরি থেকে ফিরে এসে পারফর্মেন্সে ভাটা পড়ে কিনা তা দেখার ব্যাপার। সে একই সাথে লিভারপুল এবং ইজিপ্টের প্রধান অস্ত্র।
অভিনন্দন রিয়াল মাদ্রিদ।
জিদানের ঘাড় তেরামিতে আমাদের ভরসা আছে।
দেখা যাক ভবিষ্যতে কি আছে।

No comments:

Post a Comment